স্বদেশ ডেস্ক:
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক তা-ব চলে। সরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ফাঁড়ি ও গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, হামলা, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলে দিনভর নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। এসব ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সাত জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরে মাত্র একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৬২টির কার্যক্রম এতদিন স্থবির ছিল। এর মধ্যে ৫৩টিই ঢাকার মামলা। সেগুলো এখন সচল করছে পুলিশ। মামলাগুলোর তদন্ত গুরুত্ব দিয়ে ফের শুরু করা হচ্ছে।
সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। এ নিয়ে কিছু দিন ধরে নানামুখী তর্কবিতর্ক চলছে। এর মধ্যেই ঢাকার মামলাগুলোর তদন্ত ফের শুরুর কথা জানা গেল। ১৩ দফা দাবি আদায়ে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়। সমাবেশ কেন্দ্র করে ওই দিন দিনভর রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও বাগেরহাটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয় রাজধানীতে। এর সূত্র ধরে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও আশপাশ এলাকায় তা-বলীলা চালানো হয়। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মতিঝিল এলাকা। পরে মধ্যরাতে চালানো অভিযানে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হেফাজতকর্মীদের হটিয়ে দেয় বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম।
এসব ঘটনায় রাজধানীসহ সাত জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এগুলোয় তিন হাজার ৪১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৮৪ হাজার ৭৯৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এগুলোর মধ্যে শুধু বাগেরহাটেই দায়ের হওয়া মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশ বা প্রসিকিউটররা হত্যাচেষ্টা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আসামিদের দোষী প্রমাণ করতে না পারায় বাগেরহাটের মামলায় সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। বাকি মামলার মধ্যে ১৮টির তদন্ত চলছে এবং দুটির অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া স্থবির অবস্থায় রয়েছে বাকি ৬২টি মামলা। এসব মামলার বেশিরভাগই তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই মামলাগুলোই এখন সচল করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা হিসাব-নিকাশের কারণে হেফাজতে ইসলামকে ছাড় দেওয়া হয়। কেউ কেউ এর পেছনে গোপন সমঝোতাকেও দায়ী করে থাকেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো এতদিন স্থবির ছিল। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম আমাদের সময়কে বলেন, যে মামলাগুলো আমাদের কাছে পেন্ডিং ছিল, সেগুলোর তদন্ত এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, মামলাগুলোর এখনো চার্জশিট দেওয়া হয়নি। তদন্তের স্বার্থে এখন এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না। হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। তাই এখন কিছু বলতে চাই না।
৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত হন পুলিশের এসআই শাহজাহান। এ ঘটনায় দায়ের মামলার প্রধান আসামি হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা জুনাইদ বাবুনগরীকে ৬ মে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে ২৯ মে তিনি জামিন পান। সম্প্রতি সংগঠনটির আমির নির্বাচিত হওয়া বাবুনগরী এখনো জামিনে আছেন।
৫ মের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোতে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী, শীর্ষ নেতা মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, শামসুল আলম, মহিবুল্লাহ বাবু, মাওলানা ফরিদ উল্লাহ, মুফতি ফয়জুল্লাহ, তাজুল ইসলাম, আবুল মালেক হালিম, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ফজলুল হক জিহাদি, মুফতি হারুন ইজাহার, মাওলানা ইলিয়াস ওসমানী, নূর হোসেন কাসেমী, মাওলানা মাহফুজুল হক, আবদুল কুদ্দুস, নুরুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আমিনী, মুফতি নুরুল আমিন, শাখাওয়াত হোসেন, আতাউল্লাহ আমিন, রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ হেফাজতে ইসলামের অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি করা হয়। ঢাকার সব মামলাতেই হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী প্রধান আসামি। তবে কোনো মামলাতেই আসামি করা হয়নি সংগঠনটির তৎকালীন আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী এবং যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হয়।
তা-বের পর হেফাজতে ইসলাম দাবি করে, শাপলা চত্বরের ঘটনায় তাদের দুই হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। তবে পুলিশ জানায়, যাদের নিহত বলা হচ্ছে, তাদের নাম-ঠিকানা দিতে পারেনি হেফাজত। সরকারের পক্ষ থেকে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।